মায়ের মত ভাবিকে নিয়ে কিছু কথা

0
2
মায়ের মত ভাবিকে নিয়ে কিছু কথা

আজকে এই পোস্টের মাধ্যমে তুলে ধরবো যে মায়ের সমতুল্য যে কিছু ভাবি আছে সে ভাবিদের নিয়ে কিছু কথা। আশা করি আপনাদের ভালো লাগবে এবং হয়তো বা আপনাদের অনেকের কাহিনীর সাথে মিলে যেতেও পারেন। তো চলুন আর কথা না বাড়িয়ে দেখে নিন মায়ের মত ভাবিকে নিয়ে কিছু হাড় কাঁপানো কথা।

মায়ের মত ভাবিকে নিয়ে কিছু কথা 

ভাবী আমাদের বাড়িতে বিয়ে হয়ে আসার তিন মাসের মাথায় মা মারা যান। তখন আমার বয়স আট কী নয়। ক্লাস থ্রিতে পড়ি আমি।ঘরে বোন নাই। বাবা তো সেই কবে থেকেই সহ্যাশায়ী রোগী।সংসারটা কেমন যেন এলোমেলো হয়ে উঠতে চাইলো হঠাৎ।সবাই বললো, এবার ওদের সংসার ভাঙবেই ভাঙবে।সবাই যখন আমাদের সংসার ভাঙার লীলা দেখার প্রস্তুতি নিলো তখন ভাবী দেখিয়ে দিলেন উল্টো লীলা।মার মৃত্যুর পর যেন নতুন মা হয়ে ফিরে এলেন তিনি।

গায়ের সাজসজ্জা,বাহারি নেলপলিশ, চুড়ি, টিপ সবকিছু ছুঁড়ে ফেলে নিজের হাতে তুলে নিলেন তিনি আলমাড়ির চাবির গোছা, রান্না ঘরের হাড়ি পাতিল, আব্বার সেবা যত্ন, অষুধ খাওয়ানো, আমার পড়া তৈরি করে দেয়া, গোসল করানো, খাইয়ে দেয়া, ঘুম পাড়ানো, সবকিছু। মার শোক কী জিনিস তা আমি আদৌ বুঝতে পারলাম না। অবশ্য প্রথম প্রথম একটু খারাপ লাগতো।

মার গায়ের গন্ধ নিয়ে যে পৃথিবীতে আর দ্বিতীয় কেউ আসতে পারে না তাই! কিন্তু ভালোবাসা নিয়ে অনেকেই আসতে পারে।আমরা বলি না যে ইনি আমায় ঠিক ছেলের মতোই দেখেন! ভাবী ছিলেন এরও বেশি। কতদিন আমি দুষ্টুমি করে ঘরের এটা ওটা ভেঙে দিয়েছি। এর জন্য ভাইয়া রাগ করলেও ভাবী কিন্তু মোটেও রাগ করতেন না। ভাইয়াকে বরং বুঝিয়ে বলতেন ছোট সময় এমন কত কীই তো তুমি আমি করে এসেছি।

ভাইয়া বলতেন লায় দিয়ে দিয়ে তো মাথায় তুলছো বাদরটাকে,,ভাবী হাসতেন। বলতেন দেখো বাদরটা একদিন অনেক বড় হবে। বাবা একটু পর পর ভাবীকে ডাকতেন। একবার অষুধের জন্য, একবার মাথা গরম হয়ে গেছে বলে একটু জল ঢেলে দিতে,একটু শরবতের জন্য আরো কত কী।ভাবী হাসিমুখে সব করে দিতেন। কোনদিন তাকে আমি বিরক্ত হতে দেখিনি। কিন্তু ভাবীর মনে একটা দুঃখ ছিল। অবশ্য এই দুঃখ তিনি কখনো প্রকাশ করতেন না। মানুষ বলতো খেয়া, তোমার যে সন্তান সন্ততি নাই তোমার মন খারাপ হয় না এতে? ভাবী অবাক হয়ে বলতেন কে বলেছে আমার সন্তান নাই?নয়ন কী আমার সন্তান না ?

প্রতিবেশীরা বলতো এইসব শুধু মুখের কথাই হয় বাস্তবে হয় না।পরের সন্তান কী আর নিজের সন্তান হয় কোনদিন? ভাবী তখন চুপ হয়ে যেতেন। তারপর ঘরে এসে সেদিন আমায় পড়াতে বসে মাথায় বিলি কাটতে কাটতে বলতেন নয়ন, তুই আমার কী হস বলতো? আমি অনেক্ষণ ভেবে বলতাম ভাই। ভাবী তখন মুখটা কালো করে ফেলতেন। বলতেন,’আর কখনো ভাই বলবি না।বলবি সন্তান। তুই আমার সন্তান। আমি ডান দিকে মাথা নুইয়ে হ্যা বলতাম। ‘ দীর্ঘদিন রোগে ভোগে বাবা মারা গেলেন। আমি তখন ক্লাস সেভেনে পড়ি।ভাবীও এ বাড়িতে অনেকটা পুরনো হয়ে গেছেন।

এতদিনে তার শরীরে সত্যিকারের মা মা একটা গন্ধ এসেছে। চেহারা থেকে বৌ বৌ রুফটা একেবারেই মিলিয়ে গেছে।এই বৌ বৌ রুফ মিলিয়ে যাওয়ায় বোধহয় ভাবীর জন্য কাল হলো। ওদিকে বাবাও নাই। আমি ছোট। এই সুযোগে ভাইয়া যেন কেমন হয়ে উঠলেন। ভাবীকে আজকাল তিনি একদম সহ্য করতে পারেন না।বন্ধ্যা বলে দূরে সরিয়ে রাখেন।এক খাটে শুতে পর্যন্ত যান না।ভাবী কাছে আসলে বলেন,’তুই আমার কাছে আসবি না।তোরে দেখলে আমার মাথায় আগুন ধরে।

ভাবী অসহায়ের মতো বলতেন কই যাবো বলো আমি। তুমি ছাড়া আমার আর কে আছে? ভণিতা ছাড়।দূরে যাইয়া ভাব দেখা। আমার কাছে তোর জায়গা নাই। ভাবী বলতেন মাইয়া মাইনষের বিয়ের পর ঠিকানা একটাই।তার স্বামীর বাড়ি। এই বাড়ি ছাইড়া আমি কোথাও যাবো না। ভাইয়া রাগে গজগজ করতে করতে বলতেন,’যাইবি যাইবি।একশো একবার যাইবি। যাওয়ার জিনিস আনতেছি। ভাবী ভেবেছিলেন ভাইয়া বুঝি ওইদিন এমনিতেই এই কথা বলেছিলেন।

কিন্তু কদিন পরেই দেখা গেলো এমনি এমনি নয়। ভাইয়া সত্যিকারেই একটা মেয়েকে বিয়ে করে ফেলেছেন।সেই বউ বাড়িতেই তুলে এনেছেন। এবার শুরু হলো বাড়িতে অন্য লীলা।যারা আমাদের বাড়ির সংসার ভাঙার লীলা দেখতে চেয়ে আশাহত হয়েছিল আগে এখন যেন তারা নতুন দৃশ্য দেখার জন্য একটু আড়মোড়া ভেঙেই বসলো। ‘ নতুন ভাবী সাধারণ মেয়েদের মতো অত হাসিখুশির মানুষ নন। তিনি সব সময় চুপচাপ থাকেন। বাড়িতে তার যা কথা হয় ভাইয়ার সাথেই।খেয়া ভাবী হয়ে গেলেন এ বাড়ির আসবাবপত্রের মতো।তার সাথে কেউ কখনো কথাও বলে না, তার কোন প্রয়োজনের কথাও কেউ কখনো ভাবে না।

তো যাই হোক আমার মায়ের মত ভাবীকে সে রাতে সাফ সাফ জানিয়ে দিলেন,’আমি তোরে তালাক দিবো। ভাবী কেঁদে কেটে ভাইয়ার পা ধরলেন। বললেন বিশ্বাস করো, আমি মঙ্গলের জন্য দোয়া করাইছি। ভাইয়া বিশ্বাস করলেন না। সে রাতেই,এক তালাক, দুই তালাক, তিন তালাক বলে ভাবীর সাথে তার সমস্ত সম্পর্কের অবসান ঘটালেন ।  সে রাতে আমি ছিলাম প্রচন্ড ঘুমে।সেই ঘুম ভাঙিয়ে ভাবী আমার কপালে চুমু খেলেন, তারপর কান্না ভেজা গলায় বললেন নয়ন, আমার সব শেষ হয়ে গেল রে! আমি কোনদিন ভাবিনি তোদের ছেড়ে চলে যেতে হবে এভাবে! এই বাড়ি থেকে যে মৃত্যুর আগে বেরিয়ে যাবো তা আমার কল্পনাতেও আসেনি। কথাগুলো শেষ করতে পারলেন না ভাবী। ……

শেষ কথা

এই গল্পের বাকি অংশ হয়তো বা আরেকটি পোষ্টের মাধ্যমে পেয়ে যাবেন। তো আপনাদের যদি এই পোস্টটি ভালো লেগে থাকে তাহলে অবশ্যই এই সাইটে ভিজিট করে অন্য গর্ব পড়ার জন্য অনুরোধ রইল। আর যদি এই পোস্টটি ভালো লেগে থাকে তাহলে অবশ্যই শেয়ার করবেন।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here